টার্কি পাখি বা টার্কি মুরগি পালন


টার্কি এক ধরনের বৃহদাকৃতির পাখি বিশেষ দেখতে মুরগির মত হলেও টার্কি মুরগির চেয়েও আকারে অনেক বড় হয় এবং এদের লালন পালনেও ভিন্নতা রয়েছে টার্কি প্রকৃতপক্ষে বন্য পাখি উত্তর আমেরিকাতে প্রথম গৃহপালিত পাখি হিসেবে টার্কি পালন করা হয় পশ্চিমা বিশ্বে আরো আগে থেকে শুরু হলেও বাংলাদেশে কিছু বছর যাবত এরা গৃহপালিত পাখির স্থান দখল করে নিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাবার হিসেবে টার্কির মাংশ বেশ জনপ্রিয় এবং দামি খাদ্য, ইদানিং বাংলাদেশেও টার্কির মাংশের বেশ কদর বাড়ছে টার্কির মাংশ আমিষের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস তাছাড়া টার্কির মাংশ অনেকটাই কোলেস্টেরল মুক্ত অন্যান্য গৃহপালিত পাখির তুলনায় টার্কি বেশ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন  টার্কি পালন লাভবান হওয়ায় বাংলাদেশে এখন ব্যক্তি উদ্যেগে বাণিজ্যিক ভাবে টার্কি পালন শুরু হয়েছে দেখতে সুন্দর হওয়ায় অনেকে আবার শখের বশেও টার্কি পালন করছেন

টার্কি মুরগি


পুরুষ টার্কিস্ত্রী টার্কির চেয়ে অনেক বেশি বড় এবং আকর্ষণীয় হয়ে থাকে



টার্কির জন্য ঘর তৈরি

টার্কির জন্য লম্বালম্বি ভাবে ঘর তৈরি করতে হবে, ঘরের প্রস্থ যেন বিশ থেকে ত্রিশ ফুটের বেশী না হয়। যাতে করে ঘর বাতাসে ঠিক মত কাবার করতে পারে। অর্থাৎ ঘরটি হবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে লম্বালম্বি। এবং দৈর্ঘ ঠিক করতে হবে টার্কির সংখ্যা অনুযায়ী (একটি পূর্ণবয়স্ক টার্কির জন্য চার থেকে পাঁচ ফিট জায়গা হলে ভালো হয়) ঘরের মেঝেটা পাকা করে নিতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন ঘর ধোয়ার পর পানি পেছন দিকে চলে যায় সে ভাবে সামান্ন ডালু রাখতে হবে। অতিবৃষ্টি কিংবা বন্যার সময় যেন পানি না উঠে, সে অনুযায়ী উচূ করতে হবে
ঘরের মেঝে থেকে দেড়ফিট উচ্চতা পর্যন্ত চারপাশে ইট (ব্রিক) দিয়ে ওয়াল করে দিতে হবে
এরপর উপরে পাঁচ থেকে ছয় ফিট পর্যন্ত নেট ব্যবহার করতে হবে, খেয়াল রাখতে হবে নেট টা যেন যথেষ্ট মজবুত হয় এবং কোনো ভাবেই হিংস্র প্রাণী  প্রবেশ করতে না পারে
তারপর উপরে বাঁশ দিয়ে তৈরি বেড়া দিতে হবে দেড় ফিট বা দুই ফিট
এবং ছাদ হিসেবে টিন কিংবা ছনের চালা দিতে হবে তবে টিনের চালাটাই উত্তম। এতে করে পানি পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। অতিরিক্ত গরমের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য চালার নিচে চাটাই ব্যাবহার করাটা উত্তম। বিশেষ করে ঘরের উচ্চতা নয় থেকে দশ ফিটের নিচে হলে এবং ঘরের চালায় অতিরিক্ত রোদ পড়লে চালার নিচে চাটাই ব্যবহার করাটা জরুরী
সুস্থসবল টার্কি চঞ্চল প্রকিৃতির হয়ে থাকে এক্ষেত্রে এরা একটু উড়াউড়ি পচন্দ করে, সে জন্য ঘরের মেঝে থেকে চার ফিট উপরে বাঁস কিংবা লাঠি দিয়ে দিতে হবে যেন তার উপর উঠে বসতে পারে
 টার্কির ঘর তিন ভাগে ভাগ করে নিতে হবে, এক ভাগে দুই থেকে পাঁচ মাস বয়সি টার্কি রাখতে হবে, দ্বিতীয় অংশে পাঁচ মাস বয়সি বা তার চেয়ে বড় টার্কি রাখতে হবে এবং ডিম পাড়া টার্কিকে অপর অংশে রাখতে হবে
 ডিম পাড়া টার্কির ক্ষেত্রে একটা পুরুষ টার্কির সাথে তিনটা করে স্ত্রী টার্কিকে আলাদা করে রাখতে হবে


টার্কি মুরগীর খাবার দাবার

এক সময়ের বন্য পাখিটি বর্তমানে গৃহপালিত হওয়ায় টার্কির খাদ্য তালিকা বেশ লম্বা
কৃত্রিম খাবারের তুলনায় প্রাকৃতিক ঘাস এবং শাক জাতীয় খাবারই টার্কির প্রিয় খাদ্য
একটি পূর্ণ বয়স্ক টারকিকে প্রতিদিন অন্তত ২০০ গ্রাম ঘাস দিতে হবে
শাখ-সবজির বর্জ্য অংশ খাবার হিসেবে দেয়া যেতে পারে  
প্রাকৃতিক খাদ্যের মধ্যে  কলমি শাখ, বাঁধা কপি এবং অন্যান্য নরম শাক সবজি  
তবে দিনের শেষ ভাগে দানাদার খাদ্য দেয়াটাই ভাল
এছাড়া মাঠের বিভিন্ন ঘাস টার্কির প্রিয় খাদ্য
কছুরিপানা, কলাপাতা ইত্যাদি টার্কিকে খাবার হিসেবে দেয়া যেতে পারে
শাক কিংবা লতাপাতা বেশী বড় হলে তা টার্কিকে কেটে কুচি কুচি করে দিতে হবে
 দানাদার খাদ্যের মধ্যে- ধান, চাউলের কুড়া, গম, ভুট্টা  ইত্যাদি
এছাড়া টার্কি ভাতও খেয়ে থাকে
টার্কির বাচ্চা প্রোটিনের ঘাটতি পূরনের জন্য দুধ ফুটিয়ে হাত দিয়ে ভালো করে চটকে ফিডের সাথে মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে, সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন
অথবা, ডিম সিদ্ধ করে একই উপায়ে দেয়া যেতে পারে প্রথম তিন মাস পর্যন্ত
(প্রতি দশটি টার্কির বাচ্চার জন্য একটি ডিম)( লিটার পানিতে ১০০ মিলি. পরিমান দুধ মেশাতে হবে )
 ডিম পাড়ার সময় হলে, টার্কিকে বেশী বেশী পুষ্টিযুক্ত দানাদার খাদ্য দিতে হবে

বয়স অনুযায়ী টার্কির খাদ্য-

প্রথম তিন মাস টার্কিকে ব্রয়লার ফিড দিতে হবে। সাধারনত পনেরো থেকে বিশ দিন বয়সের পর শাক-সবজি জাতীয় খাবার দেয়া শুরু করতে হবে
চতুর্থ মাস থেকে লেয়ার ফিড খাওয়ানো শুরু করতে হবে
 বেশ বড় এবং ওজন হওয়ায় টার্কির ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়ে থাকে এক্ষেত্রে বাজার থেকে ‍ঝিনুকের গুড়া এনে ভালো করে সিদ্ধ করে শুকিয়ে খাবারের সাথে প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক টার্কিকে প্রতিদিন ৩০-৪০ গ্রাম ঝিনুকের গুড়া দিতে হবে, এতে করে মুরগীর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরন হবে। 

টার্কির ডিম এবং মাংশ

ছয় থেকে সাত মাস বয়স থেকে টার্কি ডিম দেয়া শুরু করে এবং টার্কি বছরে প্রায় ২০০ ‍টির মত ডিম দেয়
সাধারনত চার বছর পর্যন্ত টার্কি ডিম দিয়ে থাকে
ঠিক মত সুষম খাবার দিলে একটি টার্কি বছরে প্রায় আট থেকে দশ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়
একটি পুরুষ টার্কি সর্বোচ্চ পনেরো থেকে ষোল কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে

Post a Comment

0 Comments